বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে ৫ দেশ

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বাংলাদেশের ওপর অনেক দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিলেও সম্প্রতি কয়েকটি দেশ তা প্রত্যাহার করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি দেশ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে এবং অনেকে ভ্রমণের ওপর কড়াকড়ি শিথিলের কথাও জানিয়েছে।

ভারত: এয়ার বাবল চুক্তির ভিত্তিতে রবিবার থেকে ঢাকা-কলকাতা রুটে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। ঢাকা-দিল্লি রুটে বিমান চালু হবে ৮ সেপ্টেম্বর থেকে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ছাড়াও বাংলাদেশের বেসরকারি উড়োজাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে তাদের ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোর জন্য পর্যটন ছাড়া অন্য সব ভিসা চালু করেছে দেশটি। তবে ভারতে ভ্রমণ করতে হলে কোভিড টেস্ট এবং টিকা দেওয়ার প্রমাণপত্র দরকার হবে।

তুরস্ক: শনিবার থেকে বাংলাদেশিদের জন্য তুরস্কে বিমান চলাচল আবার চালুর কথা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে ঢাকার তুর্কি দূতাবাস। অবশ্য তুরস্কে যেতে হলে পৌঁছানো পর্যন্ত তিন দিন বা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোভিডের পিসিআরের নেগেটিভ টেস্টের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।

বাংলাদেশ থেকে যারা তুরস্কে যেতে চায় বা যারা ১৪ দিন ধরে দেশে রয়েছে এবং তুরস্কে যেতে চায়; তাদের যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা তুরস্ক সরকারের অনুমোদিত টিকার দুটি ডোজই সম্পন্ন হয়ে থাকে তা হলে কোয়ারেন্টিন করতে হবে না- বলা হয়েছে তুর্কি দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে। এর মধ্যে রয়েছে সিনোভ্যাক, বায়োএনটেক, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, সিনোফার্মের টিকার দুটি করে ডোজ। তবে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার এক ডোজ নেওয়ার পর যদি ১৪ দিন পার হয় তা হলে তুরস্কে গিয়ে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না। আর টিকা দেওয়া না থাকলে তুরস্কে পৌঁছানোর পর কোয়ারেন্টিন করতে হবে। দশম দিনে পিসিআর টেস্ট করাতে হবে। ফল নেগেটিভ এলে কোয়ারেন্টিন তুলে নেওয়া হবে। ১২ বছরের কম বয়সীদের পিসিআর টেস্ট কিংবা টিকা নেওয়ার সার্টিফিকেট দেখাতে হবে না। ফ্লাইট ক্রু, ট্রাক ড্রাইভার বা জরুরি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।

অস্ট্রেলিয়া: বাংলাদেশিদের জরুরি ভিত্তিতে এবং সীমিত আকারে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে তার জন্য বেশকিছু নিয়মকানুন অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ঢাকার দেশটির হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে। এতে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ায় যেতে অবশ্যই কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। বিমানে ওঠার আগে ৭২ ঘণ্টা বা তার কম সময়ে করা কোভিড টেস্টের নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। ঢাকা হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে সব যাত্রীকে যেতে হচ্ছে। এ ছাড়া কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকলেও অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানোর পর সরকারের অনুমোদিত নির্ধারিত ব্যবস্থাপনায় বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

ওমান: টাইমস অব ওমানসহ দেশটির স্থানীয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ওমান। গালফ নিউজের প্রতিবেদন বলা হয়, বাংলাদেশ ছাড়াও এ তালিকায় রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, তানজানিয়া, সুদান, ব্রাজিল, সিয়েরালিওন, যুক্তরাজ্য, লেবাননসহ ২৪টি দেশ।

ওমানের বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এসব সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, সব ওমানি নাগরিক, বাসিন্দা, ভিসা রয়েছে এমন ব্যক্তি বা যারা ওমানে গিয়ে অন অ্যারাইভাল ভিসা পাবেন, তারা সবাই ১ সেপ্টেম্বর থেকে ওমানে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে সে সময় তাদের কোভিড ১৯-এর কারণে জারি করা সব নির্দেশনা মানতে হবে। ওমানে পৌঁছানোর পর সেখানে কোভিড ১৯-এর দুই ডোজ টিকা নেওয়ার কিউআর কোড সংবলিত সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। তবে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর অবশ্যই ১৪ দিন পার হতে হবে।

এ ছাড়া কোভিডের পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকলে তাদের কোয়ারেন্টিন করতে হবে না। দীর্ঘ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ওমানে পৌঁছা পর্যন্ত ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড টেস্ট করাতে হবে। আর ৮ ঘণ্টার কম দীর্ঘ ফ্লাইট হলে অন্তত ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টেস্ট করাতে হবে। যাদের কোভিড ১৯-এর পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকবে না, পৌঁছানোর পর তাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। কোভিড পজিটিভ এলে অন্তত ১০ দিনের আইসোলেশনে থাকতে হবে। ওমানে পৌঁছানোর পর পিসিআর টেস্ট করালে তার খরচ ওই ব্যক্তিকেই বহন করতে হবে। তবে ১৮ বছরের কম বয়স হলে তাদের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না।

সংযুক্ত আরব আমিরাত: ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার জন্য সব ধরনের ভিসা খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, দুই ডোজ টিকা নেওয়া থাকতে হবে। ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরেই পিসিআর টেস্ট করাতে হবে।

যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আগেই তুলে নিয়েছে। তবে তারা বাংলাদেশকে এখনো লাল তালিকায় রেখেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে কেউ যুক্তরাজ্যে গেলে তাকে নিজ খরচে ব্রিটিশ সরকারের তালিকাভুক্ত হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার লাল তালিকা থেকে বাদ দিতে যুক্তরাজ্যকে চাপ দেবে ঢাকা:
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার লাল তালিকা থেকে বাদ দিতে চাপ দেবে ঢাকা। এ নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের পক্ষে এ বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন আর যুক্তরাজ্যের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পারমানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি ফিলিপ রবার্ট বার্টোন। বৈঠকে যোগ দিতে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে মাসুদ বিন মোমেনের।

সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্য পর্যটকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞায় লাল তালিকায় রেখেছে। এ তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দেওয়ার বিষয়টি এবারের বৈঠকে আনা হবে। সেই সঙ্গে ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং উন্নয়ন অংশীদারত্বের বিষয়টিতে জোর দেবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বৈঠকে রাজনৈতিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অংশীদারত্ব, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বর্তমান বৈশ্বিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হবে।

এর আগে বাংলাদেশকে ভ্রমণ সংক্রান্ত লাল তালিকায় রাখা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, যুক্তরাজ্য কোনো কারণ ছাড়া আমাদের দেশ ভ্রমণে রেড অ্যালার্ট দিয়ে রেখেছে। আমাদের চেয়ে বেশি লোক মারা গেছে ভারতে, তাদের কিন্তু রেড অ্যালার্ট দেয়নি।

সূত্র জানায়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয় নিয়ে ৪র্থ বৈঠকে মিলিত হবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব। বৈঠকটি প্রতি দুই বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এর আগে ২০১৯ সালের এপ্রিলে ঢাকায় তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বৈঠক শেষে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে।

---