বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার আহ্বান
প্রকাশিত:
১৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৩
আপডেট:
১৫ নভেম্বর ২০২৫ ২০:৩০
বাংলাদেশের সমুদ্রজুড়ে প্লাস্টিকের চাপ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে, আর এর মূল উৎস অপ্রয়োজনীয় ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহার। এই বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার আহ্বান জানালেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তার মতে, তরুণদের অভ্যাস না বদলালে সমুদ্রসহ পুরো পরিবেশের জন্য ভবিষ্যৎ আরো সংকটময় হবে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে নিজ বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চট্টগ্রামের র্যাডিসন ব্লু চাটগাঁ বে ভিউতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) আয়োজিত ‘টেকসই প্লাস্টিকমুক্ত সামুদ্রিক পরিবেশ’ শীর্ষক অ্যাওয়ারনেস বিল্ডিং অ্যান্ড ডিসেমিনেশন ক্যাম্পেইনে এই আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক কমানোকে সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করতে আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘অভ্যাস না বদলালে সমুদ্র টিকবে না।’ তার মতে, প্লাস্টিক ব্যবহারের ‘সহজ’ ও ‘ফ্রি’ ধারণাই মানুষকে এই দূষণে ঠেলে দিচ্ছে। বাস্তবে প্লাস্টিক উৎপাদনের খরচ পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাকেই বহন করতে হয়; যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক থেকে টেকসই বিকল্পে যেতে সময়, শ্রম আর আচরণগত পরিবর্তন লাগে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শুধু প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করলেই হবে না, শিক্ষার্থীদের সচেতনতা, ক্যাম্পাসব্যাপী প্রচারণা এবং সহজলভ্য বিকল্প সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে মেয়েদের কাগজ, পাট বা কাপড়ের ব্যাগ তৈরি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে, তারাই ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারক, ভোক্তা, উদ্যোক্তা। তাদের মনোভাব বদলালে দেশ বদলাবে।’ তিনি মনে করেন, প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস শুধু দূষণ কমাবে না, বরং পাটসহ স্থানীয় শিল্প পুনরুজ্জীবিত করবে, জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করবে এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদনকে উৎসাহিত করবে।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সম্পর্কে তিনি বলেন, বেশিরভাগ ভোক্তা সুবিধা-নির্ভর ভুল ধারণার কারণে প্লাস্টিকের ওপর নির্ভরশীল। অনেকেই মনে করেন প্লাস্টিক ব্যাগ ‘ফ্রি’, কিন্তু উৎপাদনে শ্রম, বিদ্যুৎ, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি– সব মিলিয়ে এর প্রকৃত দাম শেষ পর্যন্ত পরিবেশকেই দিতে হয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিশ্বের নবম সর্বাধিক প্লাস্টিকদূষিত সামুদ্রিক অঞ্চল এখন বঙ্গোপসাগর। এর বড় অংশ স্থানীয় অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে নয়; বরং দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও উজান থেকে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্যের ফল। তাই শুধু রিসাইক্লিং প্রচারণা নয়, প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো এবং উৎপাদকদের কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কেনাকাটার ব্যাগে বাধ্যতামূলক মূল্য গ্রহণ, বোতলের ডিপোজিট-রিটার্ন এবং কঠোর নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশও চাইলে এসব পদ্ধতি অভিযোজন করতে পারে। একই সঙ্গে দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দ্রুত আধুনিকায়নে জোর দিতে হবে।
তিনি চার বছর মেয়াদি প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য চুয়েটকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রকল্পটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘এখনকার শিক্ষার্থীদের পরিবেশ শিক্ষা ভবিষ্যতের পরিবেশগত ফল নির্ধারণ করবে।’

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: