সৌদিতে বিদেশিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রেকর্ড
প্রকাশিত:
১০ জুলাই ২০২৫ ১৮:৩৫
আপডেট:
১১ জুলাই ২০২৫ ০৪:১৫

মাদক মামলায় দোষী সাব্যস্ত ইথিওপিয়ার দুই নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। এ নিয়ে চলতি বছরে বিভিন্ন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত শতাধিক বিদেশি নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল সৌদি। দেশটির ক্রমবর্ধমান সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরের এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।
সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার মাদক চোরাচালানের মামলায় অভিযুক্ত ইথিওপিয়ার দুই নাগরিকের সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর করা হয়েছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সর্বশেষ ওই দুই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সৌদিতে কমপক্ষে ১০১ জন বিদেশি নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘খলিল কাসিম মুহাম্মদ ওমর এবং মুরাদ ইয়াকুব আদম সিয়ো নামের ইথিওপীয় দুই নাগরিক হাশিশ পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।’’
সৌদি আরবে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত মোট ১৮৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮৮ জন সৌদি নাগরিক। যদিও ২০২৪ সালের নভেম্বরের আগেও দেশটিতে বিদেশিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছায়নি। বিশ্বে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশগুলোর অন্যতম একটি হলো সৌদি আরব।
এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সৌদি আরবে ২০২৪ সালে অন্তত ৩৩৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ১৭০ এবং ২০২২ সালে ছিল ১৯৬।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সৌদিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ক্রমবর্ধমান হার বৃদ্ধিকে ‘‘চরম অমানবিক এবং অন্যায্য বিচার প্রক্রিয়ার ফলাফল’’ বলে মন্তব্য করে।
সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার উপ-পরিচালক ক্রিস্টিন বেকারলে বলেন, ‘‘আমরা একটি ভয়ঙ্কর প্রবণতা দেখছি, যেখানে বিদেশিদের এমন অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে যে, যা কখনই এই ধরনের শাস্তির আওতায় পড়া উচিত নয়।’’
প্রায় তিন বছর স্থগিত থাকার পর ২০২২ সালের শেষ দিকে সৌদি আরব আবারও মাদকসংক্রান্ত অপরাধে দোষী সাব্যস্তদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর শুরু করে। অ্যামনেস্টি বলেছে, সৌদিতে বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব এবং নাগরিকত্ব না থাকায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন বিদেশিরা।
লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা রিপ্রিভও সৌদি আরবের সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের ঘটনা বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা জানায়। সংস্থাটি বলেছে, ২০২৫ সালে সৌদিতে যতজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাদের অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি। আর অভিযুক্তদের বেশিরভাগই মাদক-সংক্রান্ত মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
রিপ্রিভের মধ্যপ্রাচ্য মৃত্যুদণ্ড প্রকল্পের প্রধান জিদ বাসিউনি বলেন, ‘‘ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সৌদি আরবে আপনি মরুভূমির রেভ পার্টিতে অংশ নিতে পারবেন, আবার হাশিশ খাওয়ার জন্য মৃত্যুদণ্ডও পাবেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘ক্রাউন প্রিন্সের নেতৃত্বে সৌদি আরব উদার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছে, আবার প্রতিদিন মাদক সংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে। এটি নিপীড়নমূলক এক বাস্তবতা।’’
সূত্র: এএফপি।
ডিএম /সীমা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: